
টেকআলো প্রতিবেদক:
সরকারের মাইগভ প্ল্যাটফর্মের আওতায় র্যাপিড ডিজিটাইজেশন কার্যক্রমের মাধ্যমে ২৭ আগস্ট মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ৩৮টি সেবা ডিজিটাইজেশনের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক, এমপি এর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ.ক.ম. মোজাম্মেল হক এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালভাবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম, পিএএ এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষ। এটুআই-এর চীফ টেকনোলজি অফিসার মোহাম্মদ আরফে এলাহী ‘মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়-এ মাইগভের আওতায় র্যাপিড ডিজিটাইজেশন কার্যক্রম সম্পর্কিত’ মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
এর ফলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সেবাগ্রহীতাগণ নাম গেজেটে অন্তর্ভুক্তকরণ, মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা প্রাপ্তি, মুক্তিযোদ্ধা সনদের তথ্য সংশোধন’সহ প্রায় সকল বিষয়ে অত্যন্ত সহজে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সেবার আবেদন, সেবা সংশ্লিষ্ট পেমেন্ট, সেবার অগ্রগতি, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিল এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কার্যক্রম সেবাগ্রহীতা ৫টি এক্সেস পয়েন্টের মাধ্যমে (মাইগভ ওয়েব, মাইগভ অ্যাপ, ৩৩৩, ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে) সম্পাদন করতে পারবেন। এটি শুধুমাত্র মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে নয়, বরং সমগ্র বাংলাদেশের ডিজিটাল অগ্রযাত্রার পথে এক যুগান্তকারী মাইলফলক। রুপান্তিত ডিজিটাল সেবার মাধ্যমে সেবা গ্রহীতারা একটি কেন্দ্রীয় প্ল্যাটফর্ম থেকে জানতে পারবেন কোথায়/কিভাবে/কখন সংশ্লিষ্ট পরিষেবা পাওয়া যাবে। এর ফলে সেবাগ্রহীতা ও প্রদানকারী উভয়ের সময় ও অর্থের অপচয় কমে আসবে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক বলেন, মাইগভ প্লাটফর্মে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রথম মন্ত্রণালয় হিসেবে কার্যক্রম শুরুর সম্মান অর্জন করায় আমরা আনন্দিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় ডিজিটাল বাংলাদেশের যে স্বপ্ন দেখেছিলেন ২০০৮ সালে তারই সুফল আমরা এখন পাচ্ছি। এতে বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের সেবার মান বৃদ্ধি পাবে এবং কষ্ট করে আর সেবার জন্য ঘুরতে হবে না। মন্ত্রী এ সফল কার্যক্রমের জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে’কে ধন্যবাদ জানান।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক সব জায়গায় প্রযুক্তির উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়লে দুর্নীতি দূর হবে এবং সেবার মান বাড়বে। তিনি বলেন, “ইতিপূর্বে সব মন্ত্রণালয় মিলে প্রায় ১৭৮টি সেবা ডিজিটাল হয়েছে। আজকে একটি মন্ত্রণালয়, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে ৩৮টি সেবা যুক্ত হতে চলেছে।” তিনি আরও বলেন, “ইতোমধ্যে ৬০০ সার্ভিস ডিজিটালাইজ হয়েছে। আরও ২ হাজার ২০০ সেবা আমরা ২০২১ সালের মধ্যে চালু করতে চাই। সেক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। সবাই সেটা অনুসরণ করবে এ প্রত্যাশা রাখছি। আমাদের পক্ষ থেকে যে সাপোর্টগুলো লাগবে আইসিটি বিভাগ, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং এটুআই টিম সব সময় আপনাদের পাশে আছি। আমরা একসঙ্গে মিলে কাজ করে সবাই বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ পরিণত করবো। শেখ হাসিনার যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ সেই যুদ্ধে বিজয়ী হওয়ার জন্য আমরা প্রযুক্তকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করব।”
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম, পিএএ বলেন, একই পোর্টালে সকল সেবা আসায় সেবা গ্রহীতাদের বিভিন্নস্থানে আর ঘুরতে হবে না।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, জনগণের দ্বারে সেবা পৌঁছে দিতে এখনো সমস্যা রয়েছে। ডিজিটালকরণের ফলে সেবা প্রাপ্তি সহজ এবং লাল ফিতার দৌরাত্ম্য বন্ধ হবে।
সরকারের ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রচলিত ডিজিটাইজেশনের পাশাপাশি র্যাপিড ডিজিটাইজেশনের প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে আইসিটি বিভাগের এটুআই প্রোগ্রাম বিদ্যমান সিস্টেমসমূহ যেমন: পরিচয়, ই-নথি, একসেবা, বিএনডিএ, একপে ইত্যাদির সমন্বয়ে মাইগভ প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে যা ব্যবহার করে র্যাপিড ডিজিটাইজেশনের কাজ চলমান আছে।
‘মাইগভ’-এর মাধ্যমে কোন নতুন সফটওয়্যার তৈরি ছাড়াই মাত্র এক মাসে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ৩৮টি সেবা ডিজিটাল সেবায় রূপান্তর করা হয়েছে। ‘মাইগভ’ নামক ডিজিটাল সেবা প্রদানকারী একটি কেন্দ্রীয় প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সেবাসমূহকে অত্যন্ত দ্রুততম সময়ে ডিজিটাল সেবায় রূপান্তর করা সম্ভব। জনগণের দোরগোড়ায় সকল প্রকার সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সংশ্লিষ্ট সকল সেবাসমূহকে ডিজিটাল সেবায় রূপান্তরের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন এবং ইউএনডিপি এর সহায়তায় পরিচালিত অ্যাস্পায়ার টু ইনোভেট (এটুআই) প্রোগ্রাম জনগণের দোরগোড়ায় সকল প্রকার সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে ‘মাইগভ’ প্ল্যাটফর্মটি চালু করেছে, যা ২০২০ সালের শুরুর দিকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক উদ্বোধন করা হয়েছিল।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে এটুআই-এর প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ড. মোঃ আব্দুল মান্নান, পিএএ, এটুআই-এর যুগ্ম প্রকল্প পরিচালক ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্মসচিব (ই-গভর্নেন্স) ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব দেওয়ান মো: আব্দুস সামাদ, এটুআই-এর পলিসি অ্যাডভাইজর আনীর চৌধুরী’সহ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, এটুআই-এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।