শুরু হলো ডিজিটাল ট্রেড উইক

টেকআলো প্রতিবেদক:
অনলাইন ভিত্তিক বিটুবি ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম মার্চেন্ট বে’র আয়োজনে আজ থেকে শুরু হলো ডিজিটাল ট্রেড উইক। “ডিজিটাল ট্রেড ইন গ্লোবাল পার্সপেক্টিভ” শিরোনামের ওয়েবিনার সেশনের মাধ্যমে উদ্বোধন হলো সপ্তাহব্যাপি এই ডিজিটাল ট্রেড ইভেন্টের। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে করোনা পরিস্থিতিতে অনলাইন বিটুবি প্লাটফর্মের উপর গুরুত্বআরোপ করেন বক্তারা। মার্চেন্ট বে’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবরার হোসেন সায়েমের সঞ্চালনায় ওয়েবিনারটিতে প্যানেলিস্ট হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশন (ডব্লিউটিও)-এর ট্রেড পলিসি অ্যানালিস্ট মিনা হাসান, বিজিএমইএ প্রেসিডেন্ট ড. রুবানা হক, জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশান জেট্রো বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ইউজি অ্যান্ডো, পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাশরুর রিয়াজ, নিউ ভিশন সলিউশনস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারেক রাফি ভূঁইয়া।
বিজিএমইএ প্রেসিডেন্ট ড. রুবানা হক বলেন, “বাংলাদেশের সরকার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের উপর বিশ্বাস করে। বাংলাদেশ আরএমজি সেক্টরে গত চার যুগ ধরে আছে। বাংলাদেশ এখন বাজারে তাদের নিজস্ব ব্র্যান্ড নিয়ে আসতে পারে। বাংলাদেশের বাংলাদেশের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে প্রবেশের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশ নিজের মতো করে আসতে পারে। ডিজিটাল ট্রেড পুরোটাই আস্থার উপর নির্ভরশীল। পুরো পৃথিবী ডিজিটাল হয়ে গেছে তা বোঝার কোনো অবকাশ নেই। ডিজিটাল ট্রেডের কোনো বিকল্প নেই। আমাদের দেশকে ব্র্যান্ড হিসেবে তৈরি করার জন্য আমাদের সকলকে একসাথে কাজ করতে হবে।”

ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশন (ডব্লিউটিও)-এর ট্রেড পলিসি অ্যানালিস্ট মিনা হাসান বলেন, “ডিজিটাল অর্থনীতি আমাদের অর্থনীতির কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। বিটুসি তে বিক্রয় যেমন বেড়েছে তেমনি বিটুবি এর পরিমান ও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে দেশীয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা সহ সকল ধরনের ব্যবসা দেশে এবং বিদেশে খুব সহজেই প্রসার লাভ করতে পেরেছে। এই কাজ অনেক দেশকে ডব্লিউটিও’র সাথে জড়িত করবে। অনলাইনে অ্যাক্সেসের সাথে বিশ্বজুড়ে বহু লোক আন্তর্জাতিক সহযোগিতার পাশাপাশি স্থানীয় অবকাঠামোগত উন্নয়নের উপর জোর দেওয়ার জন্য কাজ করতে পারে। ট্রেড ফ্যাসিলিটেশান অ্যাগ্রিমেন্ট – টিফএ বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলির জন্য কিছু অনন্য সুবিধা রেখেছে। টিএফএ বাংলাদেশের পক্ষে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৬ সাল থেকে বাংলাদেশ ৩৬টি মেজারম্যান্ট বাস্তবায়ন। আমরা যেহেতু ডিজিটাল ট্রেডিংয়ের কথা বলছি, এখানে সামগ্রিক কার্যক্রমের নিরবচ্ছিন্নতার ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা রয়েছে। যেমন কাস্টমস সম্পর্কিত পরিমাপ, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, প্রি-অ্যারাইভালসহ এবং আরও অনেক কিছু।”

জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশান জেট্রো বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ইউজি অ্যান্ডো বলেন, “চায়নার ক্রস বর্ডার ই-কমার্সের পরিমান ৩৫০ বিলিয়ন ডলার। এর থেকে আমরা ডিজিটাল ট্রেডের যে সম্ভাবনা তা খুব সহজেই অনুমান করতে পারি। তবে এক্ষেত্রে বায়ার সাপ্লাইয়ার সবার মধ্যে একটি বিশ্বাস ও স্বচ্ছতা থাকা জরুরি। এছাড়া প্রাইভেট-পাব্লিক পার্টনারশিপের ভিত্তিতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদেরকে ডিজিটাল চ্যানেলের আওতায় নিয়ে আসতে হবে এবং সেই সাথে অবকাঠামো উন্নয়নের দিকে জোর দিতে হবে যেন সবাই এই সুযোগ পরিপূর্ণ ভাবে গ্রহন করে বিটুবি প্লাটফর্মকে কাজে লাগাতে পারে। ”

পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাশরুর রিয়াজ বলেন, “ডিজিটাল বাণিজ্য কেবলমাত্র কোভিড পরিস্থিতির কারণে নয়, জরুরি অবস্থার আগেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ডিজিটাল বাণিজ্য দুটি দেশের মধ্যে দক্ষতা দেখিয়েছে। প্রথাগত বাণিজ্যের জন্য বাংলাদেশে বাণিজ্যের ব্যয় বেশ বেশি। বিশ্বজুড়ে ১৯০ টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৬। বাংলাদেশের ডিজিটাল বাণিজ্য আনার আরও বেশি কারণ রয়েছে । ডিজিটাল ব্যবসায়ের জন্য নতুন পলিসি থাকতে হবে। পূর্ববর্তী পলিসিগুলো ডিজিটাল বাণিজ্যের জন্য যথেষ্ট আধুনিক নয়। জাতীয় একক নীতিমালার জন্য বাংলাদেশকে স্থান দেওয়া দরকার। ডিজিটাল বাণিজ্যের জন্য ডিজিটাল লিটারেসি প্রয়োজন। বৈশ্বিক উদ্ভাবনও বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কারণ এখানে ১৯০ এর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১১৬।”

ডিজিটাল ট্রেডকে প্রমোট করতে এবং তৈরি পোশাক খাতে ট্রেডের ডিজিটাইজেশনের সূচনা করতে এমন আয়োজন বাংলাদেশে এই প্রথম অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বাংলাদেশের রপ্তানি খাতকে প্রসারিত করতে এমন আয়োজন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছে এর আয়োজক মার্চেন্ট বে। আয়োজনটি চলবে আগামি ২১ অক্টোবর’২০২০ পর্যন্ত।
মার্চেন্টবের ভেরিফায়েড সাপ্লায়াররা ট্রেড উইকে নিজেদের পণ্য ও ফ্যাক্টরির সুযোগ সুবিধা প্রাইভেট সেশানের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বায়ারদের কাছে তুলে ধরতে পারবেন। এছাড়াও ভেরিফিকেশনের মাধ্যমে একজন সাপ্লায়ার এক বছরের জন্য মার্চেন্টবের বায়ার প্রমোশনে অগ্রাধিকার পাবেন।

ট্রেড উইকের সামনের দিনগুলোতে আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সেশন অনুষ্ঠিত হবে। বিশেষ করে ১৭ অক্টোবর জেসিআই বাংলাদেশের আয়োজনে লিডারশিপ কনক্লেভের তিনটি ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হবে। এসব ওয়েবিনারে বর্তমান সময়ের ডিজিটাল ট্রেড বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন টপিকে আলোচনায় অংশ নেবেন দেশ-বিদেশের বিশেষজ্ঞ দল।
এছাড়া, ২১ অক্টোবর মার্চেন্ট বে পডকাস্ট শো’র প্রিমিয়ার অনুষ্ঠিত হবে। এই পডকাস্ট শো’তে ইন্ডাস্ট্রির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনায় অংশ নেবেন সফল উদ্যোক্তা ও বিশেষজ্ঞরা।