প্রিয়শপ এবং আইপিডিসি ফাইন্যান্স এর যৌথ সাপ্লাই চেইন মূলধন যোগান প্রকল্প

টেকআলো প্রতিবেদক:
সময় এখন ই-কমার্সের। প্রতিনিয়ত মানুষ অনলাইন মুখি হচ্ছে, বাড়ছে ক্রেতা এবং ই-কমার্সের চাহিদা। কিন্তু চাহিদা থাকা সত্ত্বেও উদ্যোক্তারা প্রত্যাশিত সফলতা পাচ্ছেন না পর্যাপ্ত মূলধন যোগানে অভাবে। ফলে চাহিদা এবং সরবারহের মধ্যে একটি ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এই ঘাটতি পূরণ করতে দেশের শীর্ষ স্থানীয় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান প্রিয়শপ ডটকম এবং বেসরকারি খাতে বাংলাদেশের প্রথম আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইপিডিসি ফাইন্যান্স লিমিটেড এর মাঝে একটি সাপ্লাই-চেইন মূলধন যোগান প্রকল্প চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। উভয় প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আইপিডিসি ফাইন্যান্স লিমিটেড-এর এমডি ও সিইও মমিনুল ইসলাম এবং প্রিয়শপ ডটকম লিমিটেড-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর আশিকুল আলম খাঁন এই চুক্তি স্বাক্ষর করেন। একদম নূন্যতম তথ্য উপাত্ত প্রদান সাপেক্ষ প্রিয়শপ ডটকমে থাকা সাপ্লাইয়ারা (ভেন্ডর) জামানত এবং সুদবিহীন সাপ্লাই-চেইন মূলধন যোগান ঋণ পাবেন।

এই উপলক্ষ্যে যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত জুম অনুষ্ঠান “সাপ্লাই-চেইন মূলধন যোগান – সকল বাধা পেরিয়ে ব্যাবসা চলুক এগিয়ে” উপস্থিত বক্তারা তাদের বক্তব্যে তুলে ধরেছেন এই প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা এবং কিভাবে তা দেশের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাগণকে একই সাথে উৎসাহিত এবং সহায়তা করবে। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাগণ যদি নিজেদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে সফলভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে তাহলে এর সুফল পাবে দেশ, সমাজ এবং দেশের মার্কেট, লাভবান হবে দেশের মানুষ। আর তাই দেশের উন্নয়নে সরাসরি অংশগ্রহণ করার ইচ্ছাশক্তি নিয়েই প্রিয়শপ এবং IPDC-এর এই প্রকল্প।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বেসিস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ আলমাস কবির বলেন, “মহামারীর এই সময়ে আইপিডিসি এবং প্রিয়শপের এই ধরনের উদ্যোগ শুধুমাত্র ই-কমার্স ইন্ড্রাষ্টিকে কাজে দিবে তা না বরং ই-কমার্স খাতকে নতুন গতি এনে দিবে এবং ই-কমার্সের কার্যক্রম ভবিষ্যতে আরও বেশি সম্প্রসারিত করতে সহায়তা করবে। এই সময় তিনি জাতির এই কঠিন সময় ই-কমার্স কর্মীদের ফ্রন্ট লাইনে থেকে কাজ করার জন্য বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা জানান।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) এর প্রেসিডেন্ট শমী কায়সার বলেন, কভিড-১৯ এর ফলে মানুষ ক্রেতার পাশাপাশি নীতি নির্ধারকরাও এখন ই-কমার্সকে গ্রুত্বের সাথে দেখছেন। ঠিক এই সময়ে প্রিয়শপ এবং আইপিডিসির এই ধরনের অভাবনীয় ইনোভেশন ই-কমার্স সাপ্লাই চেইনকে অপ্রতিরোধ্য ভাবে এগিয়ে যেতে সহযোগিতা করবে বিশেষ করে আমাদের মার্চেন্টদের। এছাড়া কাঠামোগত এই ধরনের মডেল চলতি মূলধনের ঘাটতি দূর করার পাশাপাশি বিজনেসকে আরো বেশি অর্গানাইজড করবে বলে আমার বিশ্বাস।
অর্থায়নের মাধ্যমে সাপ্লায়ারদের ক্ষমতায়ন করা এবং তাদের নিয়ে একটি পরিপূর্ণ ইকোসিস্টেম তৈরি করাই বাংলাদেশের ই-কমার্স স্টার্ট-আপসের সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।
তিনি আরো জানান, অপ্রতুল সুযোগ-সুবিধা পাওয়া ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের (MSME) ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মার্কেটে বর্তমানে ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের আমানত শূন্যতা রয়েছে। এই MSME-দের ঋণ গ্রহণের পূর্ব ইতিহাস কম ও ঋণ অনুমোদন হার কম। তারা জটিল ঋণ গ্রহণ প্রক্রিয়ার সম্মুখীন হয়েছে ও উচ্চহারে সুদ প্রদান করেছে। এই ধরনের এম.এস.এম.ই-দেরকে ‘মিসিং মিডেল’ বলা হয়, কারণ ক্ষুদ্র ঋণগ্রহীতা অপেক্ষা তারা বেশ বড়; আবার বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণগ্রহীতা অপেক্ষা তারা বেশ ছোট। তাদের এই ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের আমানত শূন্যতার যদি সুরাহা করা যায় তবে বাংলাদেশের জিডিপি-তে আমরা উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি আশা করতে পারি।
আইপিডিসি ফিন্যান্স লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং সিইও মমিনুল ইউ ইসলাম বলেন “তথ্যনির্ভর অর্থনীতি ও নেটওয়ার্ক শীঘ্রই সম্পদের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে তার জায়গা দখল করতে যাচ্ছে। যে প্রবণতা এই আমূল পরিবর্তনকে পরিচালনা করছে তা ক্রমাগত বিবর্তিত হচ্ছে এবং ক্রমাগত উদ্ভাবনই এই নতুন বাণিজ্যিক বিশ্বে পথনির্দেশ দিতে পারে। এই নির্দেশনা প্রায়ই গতানুগতিক ও প্রচলিত বাণিজ্যিক ধারা থেকে ভিন্ন। সাম্প্রতিক সময়ে ই-কমার্স বাংলাদেশের অর্থনীতিকে যে রূপরেখা দিয়েছে তা থেকেই ধারণা করা যায় যে অদূর ভবিষ্যতে আমরা কী আশা করতে পারি। প্রিয়শপ এবং ই-ক্যাব উদীয়মান এই সুযোগকে আঁকড়ে ধরতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ডিজিটাল এবং ফিজিক্যাল মার্কেটপ্লেসের এই বিস্তৃতিতে ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা করতে দায়ীত্ববান এবং দূরদর্শী অংশীদার হিসেবে আইপিডিসি সর্বদাই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।”
প্রিয়শপ ডটকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও আশিকুল আলম খাঁন বলেন, “ইন্ড্রাস্টির শুরু হতে প্রিয়শপ ইকোসিস্টেম তৈরিতে কাজ করছে। ই-কমার্স খাতের মূল চালিকা শক্তি সাপ্লাইয়ার বা ভেন্ডর। তাদের অগ্রগতি নিশ্চিত না করে ই-কমার্স খাতের উন্নয়ন সম্ভব নয়। আমরা সবাইকে নিয়ে একসাথে সফলতার উচ্চ শিখরে পা রাখতে চাই। ভেন্ডরদের সরবারহ ঘাটতি পূরণ করতে পারলেই ই-বাণিজ্যে ক্রেতাদের চাহিদা পূরণ নিশ্চিত করা সম্ভব। এরফলে ভেন্ডরদের সরবারহ ক্যাপাসিটি বাড়বে বলে আমার বিশ্বাস। ”
রিজওয়ান দাউদ সামস, ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর, আইপিডিসি ফিন্যান্স লিমিটেড। “বর্তমান বিশ্বে ই-কমার্স বিকশিত হওয়ার গুরুত্ব আলাদাভাবে বলার ঊর্ধ্বে। আমাদের সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে নিবেদিত এবং ই-কমার্স এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। প্রিয়শপ এই ব্যবসায়ে অগ্রগামীদের মধ্যে অন্যতম এবং এই সেক্টরের উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। প্রিয়শপ ডটকম এর সাথে সংযুক্ত হয়ে এবং ই-ক্যাব সদস্যদের কর্মক্ষমতা বিকাশে সহযোগিতা করতে পেরে আইপিডিসি (IPDC) অত্যন্ত আনন্দিত।”এইছাড়াও প্রোগ্রামে উপস্থিত ছিলেন ‍উভয় প্রতিষ্ঠানের শীর্ষপদাধিক কর্মকর্তাবৃন্দ।