দুর্গম এলাকার ৬৫০ স্কুলের ক্লাসরুম ডিজিটাইজেসন প্রক্রিয়া শুরু

টেকআলো প্রতিবেদক:

ডাক ও টেলি যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের টেলিকম অধিদপ্তর এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাঝে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষাকে সম্পূর্ণ ডিজিটাইজেসন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিটিআরসির সার্ভিস অবলিগেসন তহবিলের অর্থায়নে হাওর, প্রত্যন্ত, অনগ্রসর ও দুর্গম এলাকার ৬৫০টি স্কুলে এই প্রকল্প ২ বছরের মাঝে বাস্তবায়িত হবে। এই প্রকল্পের আওতায় ৬৫০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সকল ক্লাশরুম ডিজিটাল হবে। তম্মধ্যে ৩০টি স্কুলে শিশুরা বইবিহীন বা অনলাইনে ট্যাবে লেখাপড়া করতে পারবে। তাদের ক্লাশে ডিজিটাল টিভি, আইপিএস ও ইন্টারনেট থাকবে। তাদেরকে ২০২০ সালে ইনটেলের সাথে উইটসা পুরষ্কার প্রাপ্ত ডিজিটাল কনটেন্ট দিয়ে পাঠদান করা হবে। ডিভাইস ও ইন্টারনেট থাকলে শিশুরা বাড়িতে বসে বা অনলাইনে ক্লাশ করতে পারবে। বেসরকারিভাবে ২০০০ ও ২০১৫ সালে এ ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা দেশে চালু হলেও সরকারিভাবে কোন প্রকল্প গ্রহণ করে পাঠ্য বিষয়ের সম্পূর্ণ ডিজিটাইজেসন করে ডিজিটাল যন্ত্রের সহায়তায় শিক্ষার সম্পূর্ণ ডিজিটাইজেসন এই প্রথম।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো: জাকির হোসেনের উপস্থিতিতে এই চুক্তি স্বাক্ষর হয়। অনুষ্ঠানে বক্তব্য পেশকালে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের মূল ভিত্তি হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা। বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় যুদ্ধের ধ্বংসস্তুপে দাঁড়িয়েও প্রাথমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণ করে গেছেন। তিনি বলেন, শিশুদের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা আনন্দময় করে ডিজিটাল শিশু শিক্ষা পাঠ্যক্রম আবশ্যক। আগামাী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রচলিত পদ্ধতির শিক্ষাকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে রূপান্তরের কোন বিকল্প নেই।

অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো: জাকির হোসেন,এমপি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব-গোলাম মো: হাসিবুল আলম, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো: আফজাল হোসেন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এম মনসুরুল আলম এবং টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মহসীনুল আলম বক্তৃা করেন। টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী শিশু বয়সকে সৃজনশীলতা ও মেধা অর্জনের সঠিক সময় উল্লেখ করে বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থীর হাতে বইয়ের পরিবর্তে একদিন ট্যাব বা ডিজিটাল ডিভাইস পৌঁছে যাবে এবং সেদিন খুবই কাছে। তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যে শতকরা ৮৮ভাগ শিশুর হাতে ট্যাব আছে। তাদের বইয়ের দিকে তাকাতে হয় না। প্রাথমিক শিক্ষা ডিজিটাল রূপান্তরের পথিকৃৎ মোস্তাফা জব্বার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা পদ্ধতির পরিবর্তনে সামান্য ফল দেবে কিন্তু প্রাথমিকের ডিজিটাল রূপান্তরে শতভাগ ফল পাওয়া সম্ভব। ১৯৮৭ সালে কম্পিউটারে বাংলাভাষা প্রবর্তনের পাশাপাশি কম্পিউটারে প্রাথমিক শিক্ষা পদ্ধতি নিয়ে তার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, ৮৭ সালে ৩২টি কেন্দ্র্র থেকে ডিজিটাল শিক্ষার জন্য ডিজিটাল সফটওয়্যার নিয়ে কাজ শুরু করলেও বাংলার উপযোগী ডিজিটাল সফটওয়্যার তৈরি তখন সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, ‘১৯৯৯ সালে আমি উপলব্ধি করি এই বিষয়টির প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া দরকার। এরই ধারাবাহিকতায় গাজীপুরে ১৩জন ছাত্রছাত্রী নিয়ে দেশের প্রথম ডিজিটাল স্কুল নিয়ে যাত্রা শুরু করি। ‘অল্প দিনের মধ্যেই তিনি শিক্ষার্থীদের দক্ষতায় মুগ্ধ হলেন উল্রেখ করে বলেন, বাচ্চাদের হাতে পাঠ্য বিষয়টি বাংলায় কন্টেন্ট করে দেওয়ার প্রচেষ্টার ধারাবাহিকতায় হলিক্রসের ইংরেজী শিক্ষক জেসমিন জুই এর মাধ্যমে ২০১০ সালে তা সফলতায় রূপ নেয় এবং বর্তমানে প্রাক প্রাথমিকের তিনটি ও প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ৫টি সহ মোট আটটি কনটেন্ট প্রাথমিক শিক্ষার ডিজিটালাইজেশনের যাত্রায় মাইলফলক হিসেবে কাজ করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। কোভিডকালে বিনা মাশুলে ডাউনলোড করে দেশের হাজার হাজার শিক্ষার্থী বাড়ীতে বসে এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে একবছরের পাঠ্যক্রম অনায়াসে একমাসে সম্পন্ন করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। মন্ত্রী ডিজিটাল শিক্ষাকে প্রাথমিক শিক্ষার মূলস্রোতধারায় সংযুক্ত করতে ২০১৫ সাল থেকে তার গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে বলেন, শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরে আইসিটি বিভাগ থেকে একটি পাইলট প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও নানা প্রতিকুলতায় তা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। দুর্গম অঞ্চলের সুবিধা বঞ্চিত অসহায় শিশুদের জন্য সামাজিক দায়বদ্ধ তহবিলের মাধ্যমে গৃহীত উদ্যোগ শিক্ষার রূপান্তরের একটি ঐতিহাসিক মাইল ফলক বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন। এর ফলে শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তর এগিয়ে নেওয়ার পথে পরবর্তি করণীয় ও প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাওয়া যাবে যা শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তর বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করতে ভূমিকা রাখবে । মন্ত্রী শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরে সম্ভাব্য সব ধরণের সহযোগিতা প্রদানে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ডিজিটাল শিক্ষা প্রবর্তনে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের ভূমিকার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, করোনাকালে অচল জীবনধারা সচল রাখার পাশাপাশি ঘরে বসে শিশুরা ডিজিটাল পদ্ধতিতে শিক্ষা গ্রহণ ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার বড় দৃষ্টান্ত। ডিজিটাল শিক্ষা বিস্তারে আমরা পৃথিবীর কাছে বাংলাদেশকে তুলে ধরতে চাই।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব বলেন, শিক্ষায় ডিজিটাল রূপান্তরে যাত্রা শুরু হয়েছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এই যাত্রার সাথী হতে পেরে আমরা আনন্দিত।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব, শিক্ষার ডিজিটার রূপান্তরে পথ ধরেই সোনার মানুষ গড়ে উঠবে উল্লেখ করে বলেন, আগামী দিনের উপযোগি মানব সম্পদ গড়ে তুলতে ডিজিটাল শিক্ষা ব্যবস্থার বিকল্প নেই।
পরে প্রাথমিক অধিদপ্তর ও টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকদ্ধয় নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সমঝোতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। চুক্তি অনুযায়ী সুবিধা বঞ্চিত প্রত্যন্ত অঞ্চলের ৬৫০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থা ডিজিটালকরণ যাত্রা শুরু হবে। টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।