করোনায় ই-কমার্স ব্যবসার প্রসার ও অবদান

করোনায় ই-কমার্স ব্যবসার প্রসার ও সমসাময়িক বিষয় নিয়ে লিখেছেন মোঃ নাজিম উদ্দিন,ব্যবস্থাপক, ব্র্যান্ড ও পণ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ, স্মার্ট টেকনোলজিস বিডি. লিঃ

নোবেল করোনা ভাইরাস ও লকডাউনঃ
বিশেষজ্ঞদের মতে নোবেল করোনা ভাইরাস এমন একটি ভাইরাস যা মানুষের দেহে অতি দ্রুত সংক্রমিত হয়, চীনের উহান শহরে একজন মাছ বিক্রেতা মহিলার শরীরে ১ম শনাক্ত হওয়া কভিড-১৯ নামের ভাইরাসটি অতি দ্রুত বিভিন্ন মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। এবং তা চীন থেকে ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন দেশে। পশু-পাখী বা জন্তু জানোয়ার থেকে আসা ভাইরাসটি পরবর্তীতে
মানুষের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং এ ভাইরাসটিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বৈশ্বিক মহামারী হিসেবে ঘোষণা দেন এবং এর বিস্তার ঠেকাতে প্রথমে চীনের উহান শহরকে সেখানকার প্রত্যেক শহরের সাথে যোগাযোগ শতভাগ বিচ্ছিন্ন বা লকডাউন করে দেওয়া হয় এবং তাতে আস্তে আস্তে বিভিন্ন দেশের সাথে চীনের আন্তর্জাতিক যোগাযোগ, চিনের অফিস-আদালত, দোকানপাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্তর ভেদে পুরোপুরি বা আংশিক আকারে বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা দেন চীনা সরকার এভাবে বিশ্বের অনেক দেশই চীনের মত একইভাবে তাদের প্রতিটি ক্ষেত্রে লকডাউনের ঘোষণা দেন।

আর এ লকডাউনের কারণে চীন সহ বিশ্বের সকল দেশেরই অর্থনীতি ও মানুষের স্বাভাবিক জীবন স্থবির হয়ে পড়ে এবং বন্ধ হয়ে যায় সকল ব্যবসায়িক কার্যক্রম ও উৎপাদন। চাকুরী হারিয়ে বেকার হয়ে যায় বিশ্বের লাখ লাখ শ্রমজীবী মানুষ, দেখা দেয় খাদ্য, চিকিৎসা সামগ্রীর সংকট এবং এ সংকট মোকাবিলায় সারাবিশ্বের মত বাংলাদেশও হিমশিম খাচ্ছে রীতিমতো। সরকারী পরিকল্পনার পাশাপাশি এগিয়ে আসেন বিভিন্ন শ্রেনী পেশার সাধারণ জনগণ এবং কাজ করে যাচ্ছেন এ সংকট মোকাবিলায়। এর মধ্যে অনেক দেশেই শিথিল হয় লকডাউন এবং পরিবর্তন আসে মানুষের জীবন যাত্রায়।

ই-কমার্স ও অনলাইন ব্যবসাঃ
ই-কমার্স বা অনলাইন ব্যবসার মূল আকর্ষন বা সেবা হচ্ছে ক্রেতারা ঘরে বা বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে বসে তাদের প্রয়োজন বা পছন্দমত কেনাকাটা করতে পারা এবং তা ক্রেতাদের উল্লেখিত স্থানে হোম ডেলিভারি পাওয়া।

বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতিতে জনসাধারণ পণ্য ক্রয়ে অধিক সুযোগ-সুবিধা নিতে সবসময় উদগ্রীব এবং বেশিরভাগ পণ্যের ক্ষেত্রে নির্ধারিত মূল্য নিয়েও তেমন চিন্তা করেন না। প্রয়োজন মেটানোই মূখ্য আর তার জন্য ক্রেতা সাধারণ দিন যত যাচ্ছে অনলাইন ভিত্তিক কেনাকাটার বিষয় নিয়ে চিন্তার স্তর প্রসস্থ করছেন নিজেদের মত করে। বিগতদিনের তুলনায় বেশ জোরেসোরে বাড়ছে অনলাইনে কেনাকাটা, কারণ ভোক্তা অনলাইনে কেনাকাটা করার মাধ্যমে তাদের অনেক মুল্যবান সময় বাচিয়ে তাদের কাজের মাত্রাকে বাড়িয়ে বিভিন্ন ভাবে বিভিন্ন কাজের সাথে সমপৃক্ত হতে পারছে। অনলাইনে কেনা কাটার জন্যে একজন ভোক্তা সহজ, নিরাপদ ও বিশ্বাসযোগ্য অনলাইন শপিং মাধ্যমগুলোকে বেছে নিচ্ছেন, যার মাধ্যমে
দিনের যেকোনো সময় সাড়া পাওয়া যায় এবং ক্রেতারা তাদের পছন্দমত কেনাকাটা করতে পারেন।

বৈশ্বিক মহামারী কভিড-১৯ লকডাউনে যখন পুরা বিশ্ব বেসামাল তখন হোমডেলিভারির মাধ্যমে মানুষের দোরগোড়ায় এসে সেবা দান শুরু করেন বিভিন্ন অনলাইন সেবাদাতা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান।

বিশ্বব্যাপী Amazon.com, AliExpress.com, eBay.com সহ অগণিত অনলাইন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান তাদের ব্যাবসায়িক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন এবং এরই মধ্যে Amazon.com কভিড-১৯ চলাকালীন তাদের ব্যবসায়িক উন্নতির মাধ্যমে শীর্ষস্থানে অবস্থান করছেন।

লকডাউনের সময় যখন সারা দেশের সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেন তখন বাংলাদেশের অর্থনীতিও স্থবির হয়ে পড়ে এবং অচল হয়ে যায় অনেক কার্যক্রম আর তখন থেকেই অনেক ব্যবসায়ী ই-কমার্সের সুচনা করেন।

ই-কমার্সে বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই যে প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের অনলাইন ব্যবসা চালু রাখেন বা নতুন করে শুরু করেন সে প্রতিষ্ঠানগুলো সফল হয়ে উঠে আসেন ব্যবসার চরম শিখরে।

ই-কমার্সে বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠানঃ
করোনা লকডাউনে আইসিটি খাতে স্টার টেক ইন্জিনিয়ারিং লিঃ, রায়ান্স কম্পিউটার সহ অনেক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান তাদের ই-কমার্স সাইটের মাধ্যমে বিক্রিত পণ্য হোম ডেলিভারি দিয়ে বাংলাদেশের আইসিটি ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করে যাচ্ছেন।

ইভ্যালি.কমঃ বাংলাদেশের ই-কমার্স সেক্টরে সাড়া জাগানো প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি যার কাজই হচ্ছে অসম্ভব কে সম্ভব করে সামর্থ্যবান ক্রেতা এবং সামর্থ্যহীন ক্রেতা সাধারণকে একই কাতারে এনে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী তাদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। ক্যাশব্যাক অফার এবং গিপ্ট কার্ডের অফার জনপ্রিয়তার শীর্ষ স্থানে অবস্থান করছেন। ইভ্যালি বাংলাদেশের ই-কমার্স ব্যবসার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

চালডাল. কমঃ ই-কমার্স ব্যবসায় গ্রোসারি ডেলিভারিতে চালডাল বাংলাদেশের সেরা প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে অন্যতম। করোনা পরিস্থিতিতে তাদের কার্যক্রমকে চালু রেখে ক্রেতাদের সেবা দিয়ে সফলতার শীর্ষে অবস্থান করছে । চালডাল তাদের নিজস্ব ওয়্যারহাউজ ব্যবহার করে তাদের ক্রেতাদের অর্ডারকৃত পণ্য সফলভাবে ডেলিভারি দিয়ে আসছেন।

দারাজ.কমঃ ই-কমার্স ব্যবসায় দারাজ বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নামকরা এবং অনেক পুরাতন সাইট। বিশেষ করে ইলেকট্রনিকস, হোম এপ্লাইয়েনস এবং জামাকাপড়ের জন্য বিশ্বস্ত সাইট।সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে দারাজ.কম গ্রোসারি হোম ডেলিভারিতে অনেক অবদান রেখে আসছেন।

মিনা ক্লিকঃ মিনাবাজার বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী সুপার শপিংগুলোর মধ্যে অন্যতম। ডিজিটাল বাংলাদেশের চাহিদা অনুযায়ী তারা তাদের ব্যবসায় নতুন করে মিনা ক্লিক নামে ই-কমার্স সাইট চালু করে এবং কভিড-১৯ মহামারীতে লকডাউন চলাকালীন সময়ে ঘরবন্দী ক্রেতাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী বাসায় ডেলিভারিতে অবদান রাখেন।

স্বপ্ন.কমঃ স্বপ্ন বাংলাদেশের সেরা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। লকডাউনে কাস্টমারদের সেবা প্রদানের লক্ষ্যে নিজস্ব ই-কমার্স সাইট চালু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী এবং গ্রোসারি ফ্রীতে হোম ডেলিভারি দিয়ে তাদের কাস্টমারদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।

এ ছাড়াও অথবা.কম, প্রিয়শপ.কম, আজকেরডিল.কম, ফার্মেসী.কম এবং বিভিন্ন জন ফেসবুক পেইজের মাধ্যমে করোনা লকডাউনের ফলে ঘরবন্দী মানুষকে মেডিসিন, হেল্থকেয়ার এবং বিভিন্ন প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী ডেলিভারিতে অবদান রাখেন।

ই-কমার্সে ক্রেতার রেফারেন্স হিসেবে আমি নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করলে বলতে পারি যে ২৩ মার্চ ২০২০ থেকে এ পর্যন্ত আামার বাসার যাবতীয় কেনাকাটা গ্রোসারি, মাছ, মাংস, ঔষধ সহ বাসার অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আমি নিজ হাতে অনলাইন শপ থেকে ক্রয় করি এবং খুব সহজে হাতে হাতে ডেলিভারি পাই, যার কারণে আমি করোনা পরিস্থিতিতে বাসায় থেকে কোনো কিছুর অভাব অনুভব করিনি এবং এ ই-কমার্স সেবার কল্যানে ১০ দিন আইসোলেশনে থেকেও আমাদের বাহির থেকে কোনো ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী বাসায় আনতে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়নি।

তাই বলবো ডিজিটাল যুগের আবিস্কার ই-কমার্স বা অনলাইন ব্যবসার প্রসার আমাদের তথা মানুষের জন্যে আল্লাহতালার পক্ষ থেকে আশির্বাদ।